অবনীন্দ্রনাথের জন্ম ১৮৭১ সালে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে। প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের পৌত্র গুণেন্দ্রনাথের কনিষ্ঠ পুত্র অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৮৮১ থেকে ১৮৮৯ অবধি সংস্কৃত কলেজে অধ্যয়ন করেন। ১৮৯৬ সালে মাত্র ছাব্বিশ বছর বয়সে কোলকাতা আর্ট কলেজের সহকারী অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। ভারতীয়দের মধ্যে তিনিই প্রথম এই সম্মান লাভ করেন। এর পরে বহুদিন ধরে বহু সম্মান অর্জন করেছেন, বহু মর্যাদা সম্পন্ন পদ অলঙ্কৃত করেছন, স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের অনুরোধে যেমন কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রানী বাগিশ্বরী অধ্যাপকের পদ অলঙ্কৃত করেছেন তেমনই ১৯৪২ থেকে ১৯৪৫ পর্যন্ত বিশ্বভারতীর আচার্যর পদেও আসীন ছিলেন। একবার নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে পরিহাসচ্ছলে বলেছিলেন অবন ঠাকুর ছবি লেখে। অথচ এই পরিহাসচ্ছলে বলা কথাটিই তাঁর সম্পর্কে প্রাঞ্জল হয়ে ওঠে। রেখায়, লেখায় যেভাবে তিনি ঠাকুরবাড়ির উত্তরাধিকারকে শুধু ধরে রাখেননি বরং নিয়ে গেছেন অন্য উচ্চতায়, তা বিস্ময়ের উদ্রেক করে। লীলা মজুমদারের মতে,"অবনীন্দ্রনাথের রচনা সবই শিল্পীর মনের কথা, তাই ছবিগুলি যেমন বাঙ্ময়, গল্পগুলিও তেমনি চিত্রময়।" এই বাঙ্ময় চিত্র এবং চিত্রময় গল্পের সাধনা ছিল শিল্পীর সারাজীবন ধরে। ইতালীয় শিক্ষক গিলার্ডির কাছে ছবি আঁকার প্রথম পাঠ লাভ করেন। তাঁর কাছে অবনীন্দ্রনাথ শেখেন ড্রয়িং, প্যাস্টেল আর জলরঙের খুঁটিনাটি। পরবর্তী কালে ব্রিটিশ শিল্পী সি এল পামারের কাছে লাইফ স্টাডি, তেল রঙ ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষালাভ করেন। তবে এই শিক্ষালাভেই থেমে থাকেনি তাঁর চিত্রকলার পারদর্শিতা। ভারতীয় রীতিতে আঁকলেন "কৃষ্ণলীলা-সংক্রান্ত"। ১৮৯৫ থেকে ঝোঁকেন পরীক্ষা-নিরীক্ষার দিকে। ভারতীয় ও পাশ্চাত্য রীতির সংমিশ্রনে তৈরী হল এক নতুন ধারা। এছাড়াও জাপানী ও লোকায়ত শিল্পরীতিও জায়গা করে নিয়েছে তাঁর শিল্প সৃষ্টিতে। চিত্রকলায় প্রথাগত শিক্ষালাভ করেছিলেন কিন্তু লেখনীর ব্যবহার ছিল সম্পূর্ণ স্বতঃস্ফূর্ত। মাত্র কয়েকবছরের বয়জ্যেষ্ঠ 'রবিকা'র অনুপ্রেরণায় লেখা হল 'শকুন্তলা'।